কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী মাবুর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত মাহাবুকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার গেইটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনা শুনে ঢাকায় অবস্থানরত পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান তাৎক্ষণিক বিমানযোগে কক্সবাজারে চলে আসেন। এখানে পৌঁছেই তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্যানেল মেয়র মাহবুবর রহমান চৌধুরী কে দেখতে ছুটে যান। তিনি চিকিৎসার যাবতীয় খোঁজ খবর নেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার নেপথ্যে অনেকেইর ইন্ধন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে চক্রটি। অচিরেই তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কক্সবাজার পৌরসভার পক্ষে লাইন্সেনবিহীন ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক (টমটম) চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এতে বেশ কিছু লাইনেসনবিহীন টমটম আটক করা হয়। এর জের ধরে টমটম মালিক সমিতির নেতার পরিচয়ে রুহুল কাদের মানিক নামের এক যুবকের নেতৃত্বে ১০/১৫ জন মানুষ পৌরসভার গেইটে দাঁড়িয়ে হৈ-চৈ শুরু করে।
এসময় কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র মাহাবুবুর রহমান তাদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানালে রুহুল কাদের মানিক প্যানেল মেয়রের উপর হামলা চালায়। এতে মাহাবুব আহত হন। ঘটনার পরপর হামলাকারি মানিককে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, এ ঘটনায় একজনকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর পর কক্সবাজার শহরের দোকান মালিকরা ধর্মঘট শুরু করেছে। একই সঙ্গে শহরে মিছিল সমাবেশ চলছে। কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের উদ্যোগে বেলা দেড় টায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা, এক ঘন্টার মধ্যে মানিককে গ্রেফতারের দাবী জানানো হয়। অন্যতায় শহরের সকল দোকান, যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
সমাবেশ বক্তারা এখন থেকে কক্সবাজার শহরের সকল প্রকার লাইন্সেনবিহীন টমটম চলাচল করতে দেবে না বলে ঘোষণাও দেন।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল করের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মুকুল, এড. রনজিত দাশ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাজী মোস্তাক আহমদ শামীম, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম মাদু, কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ হেলাল উদ্দিন কবির, কাউন্সিলর সালাহ উদ্দিন সেতু, কক্সবাজার দোকান মালিক ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ও কক্সবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি রফিক মাহমুদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
এর আগে ভোর সকাল থেকে কক্সবাজার পৌরসভার কর্তৃক নতুনভাবে দেয়া লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও ট্রাফিক পুলিশের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে শহরে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে টমটম মালিক ও চালকেরা। এতে যানবাহন সংকটে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে পথচারীরা।
অবরোধ পালনকারী টমটম চালকেরা জানান, কক্সবাজার পৌরসভা নতুনভাবে ৫০০ টমটমের লাইসেন্স দেয়। লাইসেন্স প্রতি নেয়া হয় ৮০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এসব লাইসেন্স নিয়ে টমটম চালাতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। পৌরসভার দেয়া এসব লাইসেন্স জেলা প্রশাসক ও ট্রাফিক পুলিশের অনুমোদন না থাকার অভিযোগে ধরপাকড় শুরু হয়। গত ৭ দিনে প্রায় ৩০০ টি টমটম জব্দ করেছে। টাকা নিয়ে লাইসেন্স নিয়েও তাদের টমটম ধরা হচ্ছে। তাই নিরূপায় হয়ে ধর্মটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শামসু নামে এক প্রতিবন্ধী টমটম চালক জানান, এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে কক্সবাজার পৌরসভা থেকে একটি লাইসেন্স দেওয়া হয় আমাকে। কিন্তু লাইসেন্সে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর না থাকার অভিযোগে আমার টমটমটি ট্রাফিক পুলিশ জব্দ করে। কোনভাবেই তারা টমটম দিচ্ছে না। যার ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটছে তার।
বুধবার সকালে শহরের লালদিঘী পাড়, বাজার ঘাটা, বার্মিজ মার্কেট ও কালুর দোকান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোর সকাল থেকে সড়কে একটিও টমটম নেই। গুটি কয়েক যারা টমটম নিয়ে নেমেছিল মোড়ে মোড়ে চালকেরা তাদের না চালানোর জন্য বাধা দিচ্ছে। এসময় চালকেরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়।
এদিকে টমটম মালিক-চালকদের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ভোগান্তিতে পড়ে শহরবাসী। যানবাহন সংকটে হাসপাতাল, অফিস-আদালতগামী মানুষ পড়ে বিপাকে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরে আসা মানুষ বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে। অনেকেই চাপা ক্ষোভ নিয়ে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই পৌঁছে নিজ গন্তব্যে। তবে দীর্ঘদিন পর টমটমের দৌরাত্ম্য ও যানজটহীন ফাঁকা সড়ক পেয়ে অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
পাঠকের মতামত: